Thursday, 28 May 2015

‘কাপড় খুললেই আইটেম গার্ল হওয়া যায় না’


বাংলা চলচ্চিত্রের শীর্ষ আইটেম কন্যা বিপাশা কবির। পর্দায় যাকে দেখে উত্তপ্ত শ্বাস ফেলেন হাজারো যুবক। টানা তিনবছর ধরে আইটেম গানে নিজের শীর্ষ স্থান ধরে রেখেছেন তিনি। সম্প্রতি তিনি নায়িকা হিসেবেও চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করেছেন। চুক্তিবদ্ধ হচ্ছেন নতুন নতুন চলচ্চিত্রে। তার মুখোমুখি হয়েছে প্রিয়.কম। প্রিয়.কম কার্যালয়ে বসে তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রুদ্র হক। ছবি তুলেছেন আরিফ আহমেদ।
শীর্ষ নায়িকা মাহির পর জাজমাল্টিমিডিয়ার নায়িকা হিসেবে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। প্রতিক্রিয়া কি?
জাজ মাল্টিমিডিয়ার সঙ্গে আমার সম্পর্ক বহুদিনের। মাহির যতোদিনের সম্পর্ক আমারও তাই। জাজ মাল্টিমিডিয়ার প্রথম ছবি ‘ভালোবাসার রং’ দিয়েই আমার সিনেমায় যাত্রা শুরু। এর কর্ণধার আব্দুল আজিজ ভাই আমাকে অত্যন্ত স্নেহ করেন। সৈকত নাসির পরিচালিত এ চলচ্চিত্টির ব্যাপারে অনেকদিন আগে থেকেই কথা হচ্ছিলো। নিশ্চিত করে জানলাম আমার জন্মদিনে। নি:সন্দেহে এটা আমার জন্য অনেক বড় আনন্দের পাওয়া।
দীর্ঘদিন আইটেম গার্ল থাকার পর নায়িকা হিসেবে যাত্রা শুরু হচ্ছে। নতুন পরিকল্পনার কথা জানতে চাই…
আইটেম গার্ল হিসেবে অভিনয়ে নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগ ছিলো না। এখন অভিনয়েই পুরোপুরি মন দিতে চাই। প্রায় একবছর আগে একটি চলচ্চিত্রের সাইন করেছিলাম। সেপ্টেম্বরে চলচ্চিত্রটির কাজ শুরু হয়। এখন কাজ প্রায় শেষের দিকে। পাশাপাশি আরো দুটি চলচ্চিত্রে কাজ করছি। একটি হচ্ছে ‘ক্রাইম রোড’, অন্যটি হচ্ছে ‘আড়াল’। তিনটি চলচ্চিত্রের নায়কই হচ্ছে শাহ রিয়াজ। ‘গুণ্ডামী’ এবং ‘ক্রাইম রোড’-এর পরিচালক হচ্ছে সায়মন তারেক। ‘আড়াল’ চলচ্চিত্রটির নির্মাতা হচ্ছেন শাহেদ চৌধুরী।
আইটেম গার্ল হিসেবে শীর্ষস্থানে থাকার পরও নায়িকা হিসেবে পর্দায় আসতে এত দেরী হল কেন? প্রথমেই ইচ্ছা ছিলো নিজেকে নায়িকা হিসেবে উপস্থাপনের। কিন্তু লাক বলেন আর যাই বলেন হয়ে ওঠেনি। চেষ্টা করছিলাম নিজেকে নায়িকা বা অভিনেত্রী হিসেবে উপস্থাপন করবো কিন্তু ভাগ্যের কারণে প্রতিবারই পিছিয়ে গেছি। যদিও এর মধ্যেই আমি ত্রিশটার বেশি আইটেম সং করে ফেলেছি। তবু ইচ্ছেটা তো মরে নি। সে ইচ্ছে থেকেই আবার শুরু করলাম। কিন্তু অনেকেই পেছন থেকে টানছে যাতে আমি নায়িকা না হতে পারি। উৎসাহিত করার চেয়ে নিরুৎসাহিতই করছে বেশি। তারপরেও আমার চেষ্টা আছে নিজেকে নায়িকা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার। যদিও আমি জানি একটা জায়গার স্টার হয়ে আরেকটা জায়গার স্টার হওয়া টাফ। তবু আমি চেস্টা করে যাচ্ছি। 
এ ব্যপারে দর্শকদের থেকে কেমন উৎসাহ ছিলো? 
হতাশা ছিলো নায়িকা হিসেবে শুরু না হওয়ায়। কিন্তু যখন আমি আইটেম গার্ল হিসেবে পারফর্ম শুরু করলাম তখন চেষ্টাও করেছি ফিরে আসার। অনেক দর্শকই বলেছে আপনি এত ভালো গ্ল্যামারাস, এত ভালো পারফর্ম করেন, এত সুন্দর আপনি নায়িকা হিসেবে কেন আসছেন না। সে উৎসাহই আমাকে এতদূর আসতে সাহায্য করেছে।
আইটেম গানে পারফর্ম কি চলবে?
আইটেম গান এখন কিছুটা কমিয়ে দিচ্ছি। আমার এখন একমাত্র লক্ষ্য থাকবে নায়িকা হওয়ার। বেছে বেছে ভালো ছবির আইটেম গানে কাজ করবো। নতুন নায়ক-নায়িকা আছে এমন চলচ্চিত্রে আমি আইটেম গার্ল হিসেবে কাজ করবো না। তবে যারা আমার কাছের কো-আর্টিস্ট তাদের সঙ্গে বড় বাজেটের আইটেম গানে কাজ করতে আমার কোন বাধা নেই।
সবমিলে আপনার একধরণের ক্রেজি-হট ইমেজ দাঁড়িয়ে গেছে। পর্দায় আপনাকে কেমন দেখা যাবে?
আমি সবধরণের অভিনয় করতে চাই। আমার প্রথম ছবি গুণ্ডামী’তে একজন মেয়ের ক্যারেক্টার করবো যে নিজেকে অনেক কষ্ট করে প্রতিষ্ঠিত করে। ‘ক্রাইম রোড’ এ আমি পতিতার চরিত্রে এবং ‘আড়াল’ চলচ্চিত্রে অ্যাকশন ল্যাডি হিসেবে দেখা যাবে, জাজের ছবিতেও অ্যাকশন লেডি হিসেবে অভিনয় করতে যাচ্ছি। সুতরাং আমার চরিত্রের ভিন্নতা আছে। কোন নিদৃষ্ট ফ্লেভারে সীমাবদ্ধ হতে চাই না।
আইটেম গার্ল পরিচয় নায়িকা হিসেবে কাজ করতে কেমন সহায়ক হবে?
আমি দর্শকদের মনে অলরেডি আছি। তারা যদি আমাকে পাঁচ মিনিট দেখার জন্য বসে থাকে তাহলে আমার সেই ক্ষমতা আছে যে দর্শকদের তিনঘন্টার জন্য বসিয়ে রাখতে পারবো।
এখন যারা আইটেম গান করছে তাদের ব্যাপারে আপনার পরামর্শ কি থাকবে?
আইটেম গান যারা করে তাদের জন্য কি পরামর্শ থাকবে সেটা হল, আমি যে অবস্থানটা তৈরী করে রেখেছি সেটা যেন নষ্ট না করে। শুধু কাপড় খুললেই আইটেমগার্ল হওয়া যায় না। এক্সপ্রেশনটা শরীরে-মনে ফুটিয়ে তুলতে হবে।
আইটেম গানের মাধ্যমে চলচ্চিত্রে অশ্লীলতা প্রবেশ করছে বলে অভিযোগ আছে। আপনার মন্তব্য কি?
আমি সহমত পোষন করছি। আমি অনেক মেয়ের আইটেমেই এমন দেখেছি। পোষাক খুললেই আইটেম সং হবে এমন চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে হবে। যদি এক্সপ্রেশন না থাকে, ড্রেসআপ, গেটআপ সুন্দর না থাকে তাহলে কেউ তাকে গ্রহন করবে না। অন্তত আমি যে অবস্থানটা রেখে এসেছি তা যেন নষ্ট না করে।
শোনা যাচ্ছে চিত্রনায়ক বাপ্পি আপনার সঙ্গে কাজ করতে অনিহা পোষণ করছেন…
‘ভালোবাসার রং’ চলচ্চিত্র মুক্তির পর সিনেমা হল থেকে বেরিয়েই বাপ্পি আমাকে বলেছিলো আমার সেকেন্ড ফিল্মের নায়িকা তুমি। কিন্তু একজন শীর্ষ নায়িকার জন্য তা হয়নি। সিনেমায় আমার সঙ্গে কাজ করতে রাজী হয়নি সায়মন। আমি আইটেম গার্ল তাই। কিন্তু বাপ্পি আমার খুব কাছের বন্ধু। ও কখনো বলেনি বিপাশা থাকলে আমি সিনেমা করবো না। নইলে ওর সঙ্গে এখন ‘বাজে ছেলে দ্য লোফার’ করছে কেন?
কেন এমন হচ্ছে?
কিছু কিছু মানুষ চাচ্ছে না যে আমি নায়িকা হই। অলরেডি আমি তিনটা ছবি শাহরিয়াজের সঙ্গে কাজ করে ফেলেছি। কাজেই অনেকেই চাচ্ছেনা যে বাপ্পির সঙ্গে অভিনয় করে আমি আরো ওপরে উঠে যাই। এর আগে আমাকে নিয়ে নিউজ হয়েছে আমি নাকি পর্ন ফিল্মে অভিনয় করতে চাই। আমি কি কোথাও বলেছি আমি পর্ন ফিল্মে অভিনয় করতে চাই?
কারা আপনার বিরোধিতা করছে?
সরাসরি বলতে চাই, কিছু পরিচালক, প্রযোজক এবং নায়িকা আমার বিরোধিতা করছে।
ইন্ডাস্ট্রির বর্তমান অবস্থা নিয়ে আপনার মন্তব্য কি?
আমাদের হলগুলো অনেক ভালো করাবার দরকার আছে। পরিচালক-প্রযোজকদের মন মানসিকতা পরিবর্তন করার দরকার আছে। আমরা যখন প্রথম ভালোবাসার রং সিনেমা নিয়ে আসি তখন পরিস্থিতি আরো খারাপ ছিলো। ধীরে ধীরে সব পরিবর্তন হচ্ছে। আশা করি সামনে আরো ভালো হবে।
আপনার ব্যাক্তিজীবন সম্পর্কে জানতে চাই আমি ঢাকায় বড় হয়েছি। খিলগাঁও আমার নানা নানুর কাছে বড় হয়েছি। আমার বাবা একজন গার্মেন্টস ব্যাবসায়ী। মা গৃহিনী। পড়াশোনা করছি সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এ। খুব শখের বশেই মিডিয়ায় আমার যাত্রা শুরু হয়। টাকা পয়সার জন্য মিডিয়ায় আসিনি। 

SHARE THIS

Author:

Facebook Comment

0 comments: