Monday, 2 February 2015

পাঁচ নায়িকার লজ্জা ভাঙ্গার গল্প….

নায়িকা মানেই যেন আমাদের স্বপ্নে দেখা সেই কাঙ্খিত নারী। রঙ্গিন পর্দার ঝলমলে জগতে যাকে আমরা প্রতিনিয়ত দেখি অথচ ছুঁতে পারি না। অধরা এসব নায়িকারাই আমাদের প্রাত্যহিক আনন্দ-বিনোদন, কল্পনা আর অবদমনের সঙ্গী। প্রশ্ন জাগে, ঝলমলে রূপে, রঙ্গে বড় পর্দায় আমরা যাদের দেখে কেঁপে উঠি সেইসব নায়িকারা আসলেই কি তেমন? লক্ষ লক্ষ দর্শকের সামনে নিজেকে উপস্থাপনের আগে কেমন ছিলেন তারা? কিভাবে তারা সহজ হলেন ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে? যতই বলুন প্রফেশন। রোমান্টিক দৃশ্যে নায়কের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যখন, গোপনে কেমন লাগে তাদের? অভ্যস্ত হয়ে গেছেন? তবে কেমন ছিলো প্রথম দিকের অনূভূতি? নিজেকে আবেদনময়ী করে তুলতে কেমন করে স্বল্প পোষাকে নিজেকে অভ্যস্ত করে তুললেন তারা? সেইসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে প্রিয়.কমের মুখোমুখি হয়েছেন ঢালিউডের নতুন ৫ নায়িকা।


অভিনয়ে লজ্জার কিছু নেই: মাহিয়া মাহি সাম্প্রতিক ঢালিউডের শীর্ষ নায়িকা মাহিয়া মাহি। লজ্জা তার ভেঙ্গেছে বহু আগেই। বড় পর্দায় পা ফেলার আগে বিয়ের মঞ্চে নেচেছেন এ খবর সবারই জানা। তাই বড় পর্দায়ও তিনি যে কোন পরিস্থিতিতেই সাবলিল। মাহি মনে করেন অভিনয় তার পেশা। পেশাগত জায়গা থেকে তিনি অভিনয়ের জন্য সব করতে পারেন। তবে নিজের সঙ্গে বেমানান এমন কিছু নয়। চরিত্রের সঙ্গে যায় এমন স্বল্প পোষাক পরতে মাহির কোন আপত্তি নেই। আপত্তি নেই ঘনিষ্ঠ দৃশ্যেও। মাহি বলেন, ‘আমি বাসায় যে ধরণের পোষাক পরি পর্দায়ও তেমন পোষাকই পরি। তাই খুব একটা পার্থক্য অনুভব করিনি। আর ঘনিষ্ঠ দৃশ্যে অভিনয় করতে গিয়ে আমার তেমন লজ্জা হয়নি। অভিনয়ে লজ্জার কিছু নেই। তাছাড়া আমার সঙ্গে যেসব হিরো কাজ করেছেন তারা প্রত্যেকেই বেশ প্রফেশনাল। অভিনয়ের সময় আমি চরিত্রেই ডুবে থাকি। চরিত্রের প্রয়োজনে সব করতে পারি আমি। তাই বলে ডিরেক্টরের সে অনুরোধ আমি রাখতে পারবো না যা আমার সঙ্গে বেমানান। নিজের কাজের খোঁজখবর দিলেন মাহি। বললেন, হলে চলছে ‘রোমিও বনাম জুলিয়েট‘ চলচ্চিত্রটি। আগামি মাসের ৬ তারিখ মুক্তি পাবে সাফি উদ্দিন সাফি পরিচালিত ‘বিগ ব্রাদার’। এপ্রিলে মুক্তি পাবে ‘অনেক দামে কেনা’। ছবিগুলো হলে গিয়ে দর্শককে দেখতে অনুরোধ জানাই। এখন ব্যস্ত আছি সম্প্রতি চুক্তিবদ্ধ হওয়া অগ্নি ২, নিয়তি ও ওয়ারিশ নিয়ে



 লজ্জায়, ভয়ে বাথরুমে গিয়ে টানা আড়াই ঘন্টা বসে ছিলাম: পরীমনি সম্প্রতি শফিক হাসান পরিচালিত ধূমকেতু চলচ্চিত্রে চিত্রনায়ক শাকিব খানকে চুমু খেয়ে ঢালিউডে ঝড় তুলেছেন চিত্রনায়িকা পরীমনি। ক্যামেরার সামনে শুরু থেকেই কি তিনি এমন সাহসী ছিলেন? শুনুন তার মুখেই- আমার প্রথম চলচ্চিত্র ভালোবাসা সীমাহীন। প্রথম যেদিন সেটের সামনে দাড়াই সেদিনের গল্প বলছি। সেদিন সারদিন খুব বৃষ্টি হচ্ছিলো। গানের কিছু অংশের শ্যুটিং হবে। অপেক্ষা করতে করতে রাত। বৃষ্টি থামলো। আমি একটা নীল শাড়ি পরে ছিলাম। শ্যুটিং শুরু হবে বলে ডিরেক্টর ডাকলো। সেটে গিয়ে দেখি হাজার হাজার মানুষ। আমি ভয়ংকর নার্ভাস ছিলাম। ড্যান্স ডিরেক্টর মাসুম বাবুল আমাকে দৃশ্য বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন। দৃশ্যটা ছিলো এমন- সিনেমায় আমার হিরো মিলন ভাই আমার হাত ছুঁয়ে ছুঁয়ে এক পর্যায়ে আমার ঘাড়ে হাত দিবেন। জড়িয়ে ধরবেন। দৃশ্যের বর্ণনা শুনে আমি ঘেমে গেলাম। বললাম, আমি একটু বাথরুম থেকে আসি। এই বলে, লজ্জায়, ভয়ে বাথরুমে গিয়ে টানা আড়াই ঘন্টা বসে ছিলাম। মনে মনে ভাবছিলাম, বাসায় চলে যাবো। ফিল্ম করবো না। এমন সিনে কাজ করা আমার পক্ষে সম্ভব না। ঘামতে ঘামতে বারবার শাড়ি খুলছিলাম, টিপ খুলছিলাম, চুড়ি খুলছিলাম। তিনবার শাড়ি চ্যাঞ্জ করেছি। পরে সেদিনের শ্যুটিং ক্যানসেল হয়। পরের দিন সবাই আমাকে বুঝিয়ে সহজ হতে সাহায্য করে। একটা দু’টা সিন করার পর ধীরে ধীরে আমার অস্বস্তি কেটে যায়। এখন আর ক্লোজ সিন করতে শর্ট ড্রেস পরতে খারাপ লাগে না আমার। সর্বশেষ শফিক হাসান পরিচালিত ‘ধূমকেতু’ নামে একটা ফিল্মে সবচেয়ে ক্লোজ সিন করেছি। হিরো কে চুমু খেতে হয়েছিলো। তবে সিনেমায় হয়তো দর্শক সেটা দেখতে পাবেন না।


 নতুন হিরোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ দৃশ্যে অভিনয়ে এখনো লজ্জা পাই: অমৃতা খান অমৃতার শুরুটা বিজ্ঞাপন চিত্রে। প্রথম যখন ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান তখন ভয় পাননি অমৃতা। কিন্তু বড় পর্দা? বড় পর্দার জগত যে ভিন্ন। প্র্রথম সাত দিন তাই অমৃতার লজ্জা ও বিব্রতবোধ নিয়েই কেটেছে। স্বল্প পোষাক পরতে হবে যখন শুনলেন, তখনতো রীতিমতো ডিরেক্টরের সঙ্গে ঝগড়া। কিন্তু কি আর করা। বানিজ্যিক ছবির জগতটাই এমন। শত শত লোকের সামনে শর্ট ড্রেস পরতে হলো তাকে। সে লজ্জা বেশিদিন টিকলো না। অভ্যস্ত হয়ে উঠলেন তিনি। অমৃতা বলেন, ‘আমি স্বাচ্ছন্দ বোধ করি শালীন পোষাকে। চরিত্রের প্রয়োজনে শর্ট ড্রেস পরতে হলে পরবো কিন্তু তা যেন মাত্রা ছাড়িয়ে না যায় এমনটাই চাই।যেমন, শর্ট স্কার্ট পরাই যাই কিন্তু উপরের টপস টা একটু বড় হলে আমার আপত্তি নেই। সবমিলে মা বাবা সহ সিনেমা হলে গিয়ে যেন লজ্জায় পড়তে না হয়।’ অমৃতা আরো বলেন, শর্ট ড্রেস পরা মানেই কিন্তু অশ্লীলতা নয়। উপস্থাপনের ভঙ্গিটাই আসল। যেমন টপ শট এ অস্বস্তি বোধ হয় আমার। এ পর্যন্ত সবচেয়ে শর্ট ড্রেসে ও ক্লোজ সিনে অভিনয় করেছি ওয়াজেদ আলি সুমনের পাগলা দিওয়ানা নামের চলচ্চিত্রে। ডিরেক্টরের বিশেষ অনুরোধে রাজী হতে হয়েছে।’ ঘনিষ্ঠ দৃশ্যে অভিনয় করতে অমৃতার লজ্জাই লাগে। অমৃতা বলেন, ‘পরিচিত হিরো থাকলে অস্বস্তি কিছুটা কম হয়। নতুন হিরোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ দৃশ্যে অভিনয়ে এখনো লজ্জা পাই।’ কথাটা বলতে বলতে লজ্জায় লাল হচ্ছিলেন অমৃতা। নির্মানাধীন চলচ্চিত্র টার্গেট, অসম প্রেম, মিশন আফ্রিকা এবং গুণ্ডা দ্য টেরোরিস্ট নিয়ে এখন ব্যস্ততা তার।


শ্যুটিং সেটে দাঁড়িয়ে কখনোই মনে হয়নি আমি একটা মেয়ে : প্রসূন আজাদ লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রসূন আজাদের শুরুটা টিভি নাটক দিয়ে। সম্প্রতি চলচ্চিত্রের দিকে মনযোগি হয়েছেন তিনি। প্রসূনের ক্যামেরাভীতি তাই বহু আগেই কেটেছে। ক্যামেরার সামনে দাঁড়ালে অভিনয় ছাড়া আর কিছুই মাথায় থাকে না তার। তবে রোমান্টিক সিনে নায়কের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতায় ভেতরে ভেতরে তার লজ্জা আর অস্বস্তি কাটেনি। এটাকে স্বাভাবিক বলেই মনে করেন তিনি। প্রসূন বলেন, ‘র্শর্ট ড্রেস আমাকে কখনোই ভাবায় নাই। শরীরের অংশ দেখাতে আমার লজ্জা লাগেনাই। শ্যুটিংটা আমার কাছে অন্যরকম মোহ। শ্যুটিং সেটে দাঁড়িয়ে কখনোই মনে হয়নি আমি একটা মেয়ে। অভিনয়ে ডুবে থাকি। তবু একেবারে যে লজ্জা হয়না আমার তা না। নায়ককে জড়িয়ে ধরতে ভেতরে ভেতরে লজ্জা পাই। অস্বস্তি লাগে যখন শ্যুটিং সেটে শরীরের দিকে কেউ তাকিয়ে থাকে। কেননা আমি চাইবো না নিশ্চয়ই শ্যুটিং সেটে আমার দিকে কেউ কুরুচিপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকাক। কাজের ক্ষেত্রে পুরুষদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলানো উচিত। একটা স্মৃতি মনে পড়ে, তৌকির ভাইয়ের সঙ্গে একটা নাটকে কাজ করতে গিয়ে একটা বেড সিন করতে হয়েছিলো আমার। ভয়ংকর নার্ভাস ছিলাম। ব্যক্তিগতভাবে ওনাকে আমি অসম্ভব শ্রদ্ধা করি। নাটকটিতে আমার সঙ্গে মাতাল স্বামীর চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন তিনি। দৃশ্যটি করতে গিয়ে আমার সারা শরীর কাঁপছিলো। তৌকির ভাই আমাকে অসম্ভব হেল্প করেছিলেন দৃশ্যটি করতে।’ চলচ্চিত্রে অভিনয় ছাড়াও এখন আইটেম গানেও পারফর্ম করছেন প্রসূন। মার্চেই মুক্তি পাবে অচেনা হৃদয় চলচ্চিত্রটি। প্রসূন এখন ব্যাস্ত জয় পরিচালিত ‘নাদিয়ার বিয়ে ১৪৪ ধারা’, জায়েদ রেজওয়ান পরিচালিত ‘মৃত্যুপুরি’ ও মাসুদ আখন্দ পরিচালিত ‘স্বপ্নপোকা’ চলচ্চিত্র নিয়ে।





আমার লজ্জা শরম একটু কম: মিষ্টি জান্নাত গতবছর বেশ কিছু চলচ্চিত্রে একসঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছিলেন মিষ্টি। নতুন বছরে তার পরিকল্পনা- গড়পড়তা ছবিতে আর কাজ করবেন না তিনি। প্রতিবছর দুটি ভালো চলচ্চিত্রে কাজ করবেন। সে পরিকল্পনা নিয়েই সম্প্রতি চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন সজল আহমেদের পরিচালনায় কলকাতার জনপ্রিয় নায়ক সোহমের বিপরীতে ভালোবাসার রাজকন্যা এবং চিত্রনায়ক বাপ্পির বিপরীতে ভালোবেসে ছুঁয়ে দিলাম চলচ্চিত্রে। অচিরেই মুক্তিপাচ্ছে মিষ্টি অভিনীত আলোচিত চলচ্চিত্র ‘চিনিবিবি’। সিঙ্গাপুর থেকে ফিরে নিজের ব্যাস্ততার খোঁজখবর দেয়ার পর মুখ খুললেন মিষ্টি। হাসতে হাসতে বললেন, আমার লজ্জা শরম একটু কম। ক্যামেরার সামনে তেমন লজ্জা পাইনাই। ঘনিষ্ঠ দৃশ্য বলতে নায়ককে জড়িয়ে ধরা। প্রথমদিকে একটু অস্বস্তি হচ্ছিলো। বারবার টেক নিতে হচ্ছিলো একটা শট। প্রথম চলচ্চিত্রে আমার হিরো ছিলো বাপ্পি। তার সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক থাকায় কাজ করতে সহজ হয়েছে। আমার ধরতে লজ্জা হচ্ছিলো। পরে ডিরেক্টর বললো থাক, তোমার ধরতে হবে না নায়কই তোমাকে ধরবে। বলতে বলতে হাসছিলেন মিষ্টি। বললেন, প্রথম দিকের অস্বস্তি এখন কেটে গেছে। তবে এমন কোন দৃশ্যে অভিনয় করবো না যেটা বাবা মা সহ দেখতে পারবো না। স্বল্প পোষাকেও শালীনতা বজায় রাখতে চান মিষ্টি।

SHARE THIS

Author:

Facebook Comment

0 comments: