Thursday, 29 January 2015

নিজের স্বপ্নের জায়গা থেকে সরে যাওয়াটা খুবই কঠিন একটা সিদ্ধান্ত ছিলো: আফজাল হোসেন


কয়েক দশক ধরেই বাংলাদেশে খুবই পরিচিত মুখ আফজাল হোসেনতিনি একাধারে অভিনেতা, নির্দেশক, লেখক, চিত্রকার, কবি এবং ক্রিয়েটিভ আর্টিস্ট১৯৫৪ সালের ৩০ জুলাই সাতক্ষীরার পারুলিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন তিনিতারকা ও বিশিষ্ট টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব হওয়ার আগে তিনি মঞ্চনাটক এবং বাংলাদেশ টেলিভিশনের নাটকে অভিনয় করতেনবিজ্ঞাপনচিত্র নির্মাতা হিসেবেও তিনি প্রসিদ্ধআফজাল হোসেনের বিশেষ এ সাক্ষাৎকারটি ছাপিয়েছে দেশের শীর্ষ ইংরেজী দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার প্রিয়.কম পাঠকদের জন্য রইল আফজাল হোসেনের সেই সাক্ষাৎকারটি
প্রশ্ন: আপনি তো বহুমুখী প্রতিভার অধিকারীএকাধারে অভিনয় করেন, নির্দেশনা দেন, ছবি আঁকেন, কবিতা লিখেনকিন্তু এসবকিছুর মধ্যে কোন জায়গাটায় অাপনি বেশি স্বচ্ছন্দবোধ করেন?
আফজাল হোসেন: অাসলে আমার সব কাজগুলোকেই আমি সমানভাবে ভালোবাসিআর একারণেই ভিন্ন ভিন্ন কাজ করা সত্বেও আমি এখনো সবগুলো কাজই ভালোভাবে করতে পারছিআমি ভাগ্যবান যে আমার প্রতিটি কাজের ক্ষেত্রেই আমি সময় এবং মনোযোগ দুটোই দিতে পারিআমি কখনোই বলিনা আমি এই কাজ গুলো ভালো বা খারাপ করি, কিন্তু আমি যা-ই করি না কেন, তা খুব উপভোগ করিসুতরাং প্রশ্নের উত্তরে আমি এটা বলতে পারবো না যে, আমি আমার কাজের একটি বিশেষ দিককে বেশি ভালোবাসিআমি বিখ্যাত লেখক বা বিখ্যাত কবি হওয়ার জন্য লিখি না, বরং নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে ও নিজের সন্তুষ্টির জন্যই লিখিআমি সবসময়ই আমার কাজের প্রতি অঙ্গীকারাবদ্ধ এবং আমার কাজের মধ্য দিয়ে সমাজে একটা ভালো মানদণ্ড স্থাপন করতে চাই
প্রশ্ন: এই যে বিভিন্ন মাধ্যমে আপনার অবাধ বিচরন সেটা কেন? অভিনয় বা নির্দেশনার উপর বেশি জোর দিলে আপনার জন্য আরো ভালো হতো, এটা কখনো মনে হয়?
আফজাল হোসেন: মঞ্চে বেশি সময় দেয়া আমার পক্ষে সম্ভব ছিলো নাবরং টেলিভিশনে বেশি সময় দেয়া সম্ভব ছিলো আমারটেলিভিশনে কাজ করা বন্ধ করেছি যখন আমি মনে করেছি যে, এখান থেকে যা যা পাওয়া সম্ভব তা আমি ইতিমধ্যেই পেয়ে গেছিআমার মনে হয়েছে, এখানে থেকে আমি বেশি কিছু করতে পারবো না, অন্তত বাংলাদেশে তো নয়ই, বিশেষভাবে যখন অধিকমাত্রায় ফিল্টারিং শুরু হয়েছিলো এবং ভালো ভালো নির্দেশকেরা ক্ষতির মুখে পড়তে শুরু করলেনআমি সিনেমা করা শুরু করলামযদিও এর আগে আমি মঞ্চনাটক এবং বিটিভির নাটকে অভিনয় করেছি, তারপরও অনেকেই ব্যাপারটিকে ভালোভাবে নেয়নিকিন্তু সেখানেও আমি আমার প্রত্যাশামতো সাফল্য পেলাম নাকাজেই আমি সেটাও ছেড়ে দিলামনিজের স্বপ্নের জায়গা থেকে সরে যাওয়াটা খুবই কঠিন একটা সিদ্ধান্ত ছিলো আমার জন্য কিন্তু বাস্তবতাটা এমনই ছিলো যে, আমাকে সেটাই করতে হলো
প্রশ্ন: অাপনার স্ত্রীর নাম মনাঅাপনাদের বিয়ের প্রেক্ষাপটটা কি?
আফজাল হোসেন: প্রথমে কিন্তু আমরা একে অপরের সম্পর্কে খুব বেশি জানতাম নাআমি বুঝতে পারতাম যে মনা আমাকে পছন্দ করেসেটা আমি যে অভিনেতা সে হিসেবে নয়, বরং ব্যাক্তি আফজাল হোসেনকেই পছন্দ করেছিলো ওএকজন অভিনেতা হিসেবে নিজের অবস্থানকে তখনো আমার কাছে সুদৃঢ় মনে হয়নিতাই আমি চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম যে, মনাকে বিয়ে করার প্রস্তাবটা ওর পরিবার কিভাবে নেবেকিন্তু মনার মা আগে থেকেই ব্যাক্তিগতভাবে আমাকে পছন্দ করতেনমনাকে বিয়ের প্রস্তাব করার সময় এই ব্যাপারটি আমাকে বেশ সাহস জুগিয়েছে
প্রশ্ন: আপনারা তো দুজনই পেশাদারএকজন আরেকজনের কাজের সমালোচনা করেন না?
আফজাল হোসেন: মনাকে যারা চেনে, তারা সবাই বলে মনার কাজে তারা সমালোচনার কোনো উপাদান পায়নাপক্ষান্তরে আমার কাজের ব্যপারে (আমি বলিনা যে আমার সব কাজই ভালো) সবসময়ই ওর সাথে যৌক্তিক আলোচনা সমালোচনা হয়আমি আমার কাজকে সমর্থন করি, তবে যুক্তির বিচারে আমরা অবশ্যই একমত হই এবং যেটা ভালো ও সঠিক সেটাকেই মেনে নিইআর আমি যা কিছু করি, তা সবার আগে মনাই দেখেঅামি যেকোন লেখা লিখে সেটা সবার আগে মনাকে পড়তে দিই এবং তার প্রতিক্রিয়া দেখে বুঝি লেখাটা কতটা ভালো বা খারাপ হলো
প্রশ্ন: রাজনীতিতে আপনার কোনো আগ্রহ আছে?
আফজাল হোসেন: আমি সত্যিই রাজনীতির অনুপযুক্ত রাজনীতিতে একটা জিনিস প্রয়োজন যে আপনি ভাববেন একরকম কিন্তু বলার সময় বলবেন অন্যরকমএটা মনা খুব ভালো বলতে পারবে যে, আমি খুবই সহজ সরল এবং সৎ একজন মানুষআমি যা বলি এবং যা করি এসব থেকে আমার রাগ, দু:খ, আনন্দ সব সহজেই বোঝা যায়কিন্তু রাজনীতির ক্ষেত্রে এসব আপনাকে খুব সতর্কতার সাথে করতে হবেআমি যা, তাতেই অমি সুখীআমার পরিবার, বন্ধুবান্ধব এবং আমার কাজ নিয়ে আমি খুশিকিন্তু আমাদের সমাজে এখন যা অবস্থা তাতে তো খুশি হওয়ার কোনো কারন নেইএখন এমন সব জিনিস হচ্ছে যা কখনোই হওয়া উচিত নয় আবার আমার জন্য বা সমাজের জন্য ভালো হবে, এমন অনেক কিছুই এখন হচ্ছেনা
স্বামী সম্পর্কে যা বললেন মনা: আফজাল সবসময় সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো দেখতেই পছন্দ করেএর ভিন্ন কিছু দেখলেই সেটা তার উপর প্রভাব ফেলেও সবসময়ই ভালো এবং খারাপের তফাৎটা বুঝতে পারেকিন্তু যে বিষয়টা তাকে সবচেয়ে বেশি পোড়ায় সেটা হচ্ছে, আমাদের সমাজে কেউই কোনো বিষয়ে সরাসরি বা স্পষ্ট করে কিছু বলে না
প্রশ্ন:নিজের সম্পর্কে এমন কিছু বলুন, যেটা কেউ জানেনা
আফজাল হোসেন: আমি আসলে দেখতে যেমন আমি ঠিক তেমনইআমি খুবই খোলামেলা এবং সোজাসুজি কথা বলতে পছন্দ করিআমার মধ্যে দ্বৈত সত্তা নেই যে মুখে একরকম কিন্তু ভেতরে আরেকরকমআমি জানি এই যুগে এভাবে থাকাটা মুশকিলের কাজ যেখানে আপনার অনিচ্ছা সত্বেও আপনাকে অনেক কাজ করতে হয়কিন্তু আমি আবারো বলছি আমি খুব সুখী



SHARE THIS

Author:

Facebook Comment

0 comments: