ন বছর অপেক্ষার পর ১০ জুলাই সংগীতশিল্পী হৃদয় খানের
প্রেমের ডাকে সাড়া দেন মডেল সুজানা। ১ আগস্ট বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন দুজন। বিয়ের পর প্রথম সাক্ষাৎকারটি
দিয়েছেন তাঁরা একটি নামকরা দৈনিক পত্রিকায়। "কালের কণ্ঠ" পত্রিকার সৌজন্যে পাঠকের জন্য হুবহু তুলে দিলাম আমরা সাক্ষাৎকারটি। মূল লেখাটি
লিখেছেন রবিউল ইসলাম জীবন।
-'এত দিন শুনেছি, বিয়েতে কবুল
বলার সময় মেয়েরা কাঁদে! কিন্তু সুজানাকে কবুল বলার
সময় আমার নিজের চোখেই পানি চলে এসেছিল। খুব ইচ্ছা করছিল মন ভরে কাঁদতে! এই কান্না আসলে সুখের কান্না।' বলছিলেন হৃদয় খান। বলতে বলতে কেঁদেই ফেললেন। খানিক বাদে নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে যেন স্মৃতির ডালি খুলে
বসলেন- 'সুজানাকে আমি চিনি চার বছর ধরে। ভালোবাসাটা অনুভব করেছি শেষ তিন বছর।
এই সময়টায় অনেক কষ্ট, মন খারাপ, অভিমান আর সংশয়ের মধ্যে কেটেছে। এখন অনেক শান্তি লাগছে। আরাম লাগছে। আমি তাকে জয় করতে পেরেছি। মনে হচ্ছে, আমার জীবন সার্থক। সব চাওয়া এখন পূর্ণ। সুজানা আমার
জীবনের সবচেয়ে বড় গিফট।'
হৃদয় যখন
কথাগুলো বলছেন, তখন পাশে
দাঁড়িয়ে সুজানা। হাতে হৃদয়ের সকালের ব্রেকফাস্ট 'টোস্ট'। নিজ হাতেই তৈরি করেছেন স্বামীর
জন্য। একটু খাইয়েও দিলেন। এরপর জানালেন নিজের অনুভূতির কথা, 'আমি না এখনো
কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। গত কয়েকটা দিন অনেক বিজি ছিলাম। বিয়েটা হুট করেই হয়ে গেছে। খুব ছোট করেই করার কথা ছিল। এরপর দেখি, অল্প অল্প করে অনেক বড় হয়ে গেছে। আমাদের অনেক আত্মীয়স্বজন, বন্ধু ও
শুভাকাঙ্ক্ষী শুভেচ্ছা জানাতে এসেছেন।'
বিয়ের পর
কেমন লাগছে? এই কয়েকটা
দিন কিভাবে কাটালেন?
-'কালই প্রথম বের হয়েছি। আমরা যে বিয়ে করেছি, সেটাও একটু একটু ফিল করছি। এখন তো প্রতিদিনই দাওয়াতের ওপর আছি। কাল হৃদয়ের বড় খালার বাসায়
দাওয়াত ছিল। আজ আমার আরেক রিলেটিভের বাসায়।' বলছিলেন সুজানা। তাঁর মুখ থেকে কথাটা নিয়ে নিজের
কথা জোড়া দিতে লাগলেন হৃদয়। 'আমার কাছে তো
সব কিছুই অসাধারণ লাগছে। মনে হচ্ছে, পৃথিবীতে
আমার চেয়ে খুশি মানুষ, সুখী মানুষ
আর কেউ নেই। যাকে চেয়েছি, তাকে পেয়েছি। নিজের মধ্যে কেমন যেন একটা দায়িত্ব চলে এসেছে। সামনের
দিনগুলো কিভাবে আরো ভালো করা যায়, মনে মনে
সেটাও ভাবছি।'
হৃদয়কে 'হ্যাঁ' বলতে সুজানা
এত সময় নিয়েছেন! আর বিয়ে করছেন মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে। এটা কিভাবে সম্ভব হলো?
-সুজানা বলেন, 'খুব গভীরভাবে
চিন্তা করে দেখলাম, হৃদয় আমাকে
পাগলের মতো ভালোবাসে। হৃদয়ের চাচা-চাচি, খালা-খালুরাও আমাকে বিষয়টি বুঝিয়েছেন। আমাদের পরিবারের লোকজন ও আত্মীয়স্বজনও ওকে পছন্দ করতে লাগল। সবার কথায়
সাহস পেয়েছি। তা ছাড়া আমি হৃদয়ের মধ্যে খারাপ
কিছু দেখিনি। সব মিলিয়ে একটা বিশ্বাস তৈরি
হয়েছে। সেই বিশ্বাস থেকেই...।' খানিকটা থেমে সুজানা যোগ করেন, 'একজন মানুষ
হিসেবে হৃদয় অসাধারণ। জীবনে অনেকে আসে-যায়, তবে দুঃসময়ে
কে পাশে থাকল, সেটা
ইম্পর্ট্যান্ট। আমার বাবার যখন ক্যান্সার, সেই দুটি বছর হৃদয় নিঃস্বার্থভাবে আমার পাশে ছিল।'
সুজানা কেমন
মেয়ে? বন্ধু, প্রেমিকা, বউ- তিন
রূপেই তো দেখলেন?
-কথাটা শুনে আলতো করে হেসে দিলেন হৃদয়। এরপর
একনাগাড়ে বলে গেলেন, 'আমি আজকের এই অবস্থানে দাঁড়িয়ে আছি সুজানার ভালোবাসার ওপর ভর করে। আমার জীবনটাকে পুরোপুরি বদলে দিয়েছে সে। আগে মিউজিক
করতাম নিজের খেয়ালখুশিমতো। সুজানার প্রেমে পড়ার পর থেকে অনেক সিরিয়াস। ব্যক্তি, সমাজ, মানবতা- এ বিষয়গুলো সুজানাই আমাকে ভালোভাবে শিখিয়েছে। আগে সবাই
আমার মিউজিকটাই পছন্দ করত। এখন একজন মানুষ হিসেবেও পছন্দ করে, ভালোবাসে, দোয়া করে। সবই সুজানার অবদান। সুজানার কারণে আমার জীবনে অনেক বরকত এসেছে। সামনে আরো
ভালো হবে আমি জানি।'
পাশ থেকে
হৃদয়ের একটা অভিযোগ খণ্ডালেন সুজানা। 'হৃদয় বলে, আমি নাকি তাকে বেশি বকা দিই। আচ্ছা, ও যদি কোনো ভুল করে, তাহলে আমিই তো বকা দেব, তাই না? ভালো কিছু করলে তো আমিই বেশি খুশি হই।'
আগামী
অক্টোবরে সুজানাকে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘরে তুলে নেবেন হৃদয়। তার আগে অন্য
রকম একটা প্ল্যান আছে সুজানার। প্ল্যানটি
হৃদয়ের বেশ মনে ধরেছে। সেটা কী?
-শোনা যাক সুজানার কণ্ঠেই- 'আনুষ্ঠানিকভাবে
হৃদয়ের ঘরে বউ হয়ে যাওয়ার আগে ছোট্ট
একটি অনুষ্ঠান করব। সেখানে এতিম ও অসহায় শিশুদের দাওয়াত দেব। অনুষ্ঠানে
আমি আর হৃদয় বউ-জামাই সাজব। বাচ্চাদের সঙ্গে একত্রে খাব।'
বিয়ের ছবি
ফেসবুকে পোস্ট করার পর থেকেই ভক্ত-শুভাকাঙ্ক্ষীদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দনের জোয়ারে ভাসছে এই জুটি। সবার এমন ভালোবাসায় দারুণ উৎফুল্লও তাঁরা। তবে
সমালোচকদের কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন, সুজানা
হৃদয়ের সাত-আট বছরের
বড়।
এ প্রসঙ্গে
একসঙ্গে কথার গাড়িতে চড়লেন দুজন- 'এটা আমরা
একফোঁটাও গায়ে লাগাই না। আমাদের ধর্মে, হাদিসে- কোথাও
কিন্তু লেখা নেই যে ছোট-বড় বিয়ে করা পাপ। যাদের নিন্দা করার অভ্যাস করবে। আমরা অনেক হ্যাপি, এটাই ইম্পর্ট্যান্ট।'

0 comments: