গত এক বছরে ঢালিউডে এসেছে প্রায় ৩০
এর অধিক নায়িকা। মৌসুমী, শাবনূর, পপির পর নতুন
করে হাল ধরবেন এমন
কাউকে খুঁজতে মরিয়া হয়ে উঠেছিলো এফডিসির
নির্মাতারা। কিন্তু সে প্রত্যাশার কতটুকু পূরণ
হয়েছে? কতটা পরিবর্তন এসেছে পর্দায় ?
প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি যাই থাকুক না কেন ঢাকাই
চলচ্চিত্র পেয়েছে প্রচুর নতুন নায়িকা। পরিচালক-
প্রযোজকরা নিশ্চয়ই আর নায়িকা সংকটের কথা নয়।
কিন্তু হতাশা কি অদৌ কেটেছে? দর্শক
কি পেয়েছেন তার মনের মতো নায়িকা?
সত্যিইতো মাহি সিনেমা ছেড়ে দেয়ার
খবরে নড়ে চড়ে বসেছে এফডিসি।
তাহলে কি মাহিই একমাত্র ভরসার কেন্দ্র
হয়ে উঠছিলেন?
অসংখ্য নায়িকা এলেও পরিচালক কিংবা দর্শক
তথা সিনেমা হল
ব্যাবসায়ীরা আস্থা রাখতে পারছেন গুটি কয়েক
নায়িকার প্রতি।
নায়িকা হিসেবে নির্মাতারা আস্থা রাখতে পারছেন
কেবল মাহি, পরিমনি, আঁচল আর ববির প্রতিই।
‘ভালোবাসা জিন্দাবাদ’ চলচ্চিত্রের
মাধ্যমে নিজের অভিনয়ের চমক দেখিয়েছেন
চিত্রনায়িকা আইরিন। তাকে নিয়মিত পর্দায়
আনতে পারছেন কি পরিচালকরা?
নাটক
থেকে চলচ্চিত্রে আসা অভিনয়শিল্পী জয়া আহসান
অনেক আশা জাগিয়েও এফডিসি ঘরানার
বাণিজ্যিক চলচ্চিত্র ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম
কাহিনী’তে দর্শকের মন যোগাতে ব্যার্থ হয়েছেন ।
দেশে অফট্র্যাকের ছবি ছাড়াও তিনি এখন
ওপারবাংলার দিকে ছুটছেন। ওপার বাংলার
দিকে ছুটছেন রুহী, নবাগতা মিষ্টিসহ
আরো অনেকেই। কিন্তু দেশের দর্শকের কাঙ্ক্ষিত
নায়িকা কি কেউ হতে পেরেছেন?২০১৪ থেকে এ পর্যন্ত বাণিজ্যিক-অবাণিজ্যিক
সবমিলিয়ে প্রায় ৯০ টি ছবি মুক্তি পেয়েছে।
মুক্তিপ্রাপ্ত ছবিগুলোর দিকে তাকালে অসংখ্য
নতুন মুখ ভেসে ওঠে। ১. বিন্দিয়া ২.
রাভিনা ব্রষ্টি ৩. পিনা ৪. মেঘলা ৫. ঋদি ৬.
সম্পা ৭. ফারিয়া ৮. রথি ৯. শিরিন শিলা ১০.
সুচিত্রা জয়া ১১.রুহি ১২. মীম চৌধুরী ১৩. নুপুর ১৪.
সাবিলা সাবি ১৫. বিথি ১৬. প্রিয়া আমান
১৭.তানিয়া ১৮.
পুষ্পিতা ১৯.কথা ২০.মিষ্টি জান্নাত ২১.প্রসূন
আজাদ ২২.মৌমিতা ২৩. সিমি ২৪. আফ্রি ২৫.নীড়
২৬.জানভী ২৭.ইতিশা ২৮. অপর্ণা ঘোষ
২৯.তমা এবং ৩০. মিশু চৌধুরী।
বছরের শুরুতেই আজাদ খান পরিচালিত ‘দাবাং’
ছবিতে অভিষেক হয় বিন্দিয়া ও রাভিনা বৃষ্টির।
১৭ই জানুয়ারি মুক্তি পায় ছবিটি। অশ্লিলতার
অভিযোগে অভিযুক্ত ঐ চলচ্চিত্রে এই দুজন
নায়িকাকে বেশ কুরুচিপূর্ণ দৃশ্যে অভিনয়
করতে দেখা গেছে। মাস না পরুতেই
২৪শে জানুয়ারি মুক্তি পায় ‘দাগ এই বুকের ভিতর’।
বজলুর রাশেদ চৌধুরী পরিচালিত এ ছবির
মাধ্যমে অভিষেক হয় পিনা'র। বিনোদন বিচিত্রার
ফটোসুন্দরী প্রতিযোগিতার মাধ্যমে মিডিয়ায়
আগমন ঘটে পিনার।পিনার নায়ক ছিলেন নবাগত
জীবন। ছবিটি তেমন ব্যবসা করতে না পারলেও
পিনার হাতে আসে 'বউ বানাবো তোকে' নামের
আরো একটি ছবি।
এই মাসেরই শেষ শুক্রবার, ৩১
শে জানুয়ারি মুক্তি পায় মাহমুদ হোসেন মুরাদ
পরিচালিত 'মনের মধ্যে লেখা'। এ ছবির মাধ্যেম
বড়পর্দার দর্শকদের সামনে প্রথম হাজির হন সুপার
হিরোইন খ্যাত শম্পা। শম্পার বিপরীতে অভিনয়
করেন সাগর। নায়ক-নায়িকার দুর্বল পারফর্ম্যান্সের
কারণে এই ছবিটিও খুব
একটা সাড়া ফেলতে পারেনি। সামিয়া জামান পরিচালিত 'আকাশ কত দূরে' ছবির
মাধ্যমে বড় পর্দায় আসেন ফারিয়া।
ছবিটি মুক্তি পায় ১৪ই ফেব্রুয়ারি।
ভিন্নধর্মী ছবি হিসেবে বেশ আলোচনায়
আসে ছবিটি, সঙ্গে আলোচিত হন
নায়িকা ফারিয়াও। এর এক সপ্তাহ পরেই
২১শে ফেব্রুয়ারিতে মুক্তি পায় জনপ্রিয়
কণ্ঠশিল্পী ফেরদৌস ওয়াহিদ পরিচালিত ‘কুসুমপুরের
গল্প’। এ ছবির মাধ্যমে বড় পর্দায় অভিষেক হয়
‘মৌমিতা’র। গ্রামনির্ভর নিটোল গল্পের এই
ছবিটিও দর্শক তেমন গ্রহণ করেনি।
মাসের শেষ শুক্রবার ২৮শে ফেব্রয়ারি মুক্তি পায়
দেওয়ান নাজমুল ও স্বপন সাহা পরিচালিত যৌথ
প্রযোজনার ছবি সীমারেখা। এ ছবির
মাধ্যমে অভিষেক হয় রথির।কিন্তু দুর্বল নির্মাণের
এই ছবিতে রথির অভিনয়ও ছিল দুর্বল।
মার্চের প্রথম সপ্তাহে মুক্তি পায় মাসুম আজিজ
পরিচালিত চলচ্চিত্র 'অনন্তকালের (ফরএভার)। এ
ছবির মাধ্যমে বড় পর্দায় আসেন সুচিত্রা জয়া। আর
মাসের শেষ শুক্রবার ২৮শে মার্চ মুক্তি পায় মনসুর
আলী পরিচালিত '৭১ এর সংগ্রাম'। এ ছবির
মাধ্যমে বড় পর্দায় আসেন র্যাম্পকন্যা রুহি।
ছবিটিতে রুহির পারফর্ম্যান্স সবার নজরে আসে।
রুহি এরপর কাজ করেন অনিমেষ আইচ পরিচালিত
‘জিরো ডিগ্রী’ ছবিতে। এ সপ্তাহে মুক্তির পর
সারাদেশে চলচ্চিত্রটি দেখছে দর্শক। ওপার
বাংলায়ও চলছে রুহী অভিনীত তৃতীয় চলচ্চিত্র
‘গ্ল্যামার’।
৯ই মে মুক্তি পায় সাফি উদ্দীন সাফি পরিচালিত
'ভালোবাসা এক্সপ্রেস'। এ ছবির মাধ্যমে বড় পর্দায়
অভিষেক হয় ম্যাঙ্গোলি নাচো বাংলাদেশ
নাচো প্রতিযোগিতার প্রথম রানারআপ মিম
চৌধুরীর। ছবিতে মিম চৌধুরীর পারফর্ম্যান্স বেশ
ভালভাবেই নিয়েছে দর্শক। মে মাসের
মাঝামাঝিতে মুক্তি পায় বছরের আলোচিত
ছবি ‘আমি শুধু চেয়েছি তোমায়’। ১৬ই
মে মুক্তি পাওয়া যৌথ প্রযৌজনার
ছবিটি পরিচালনা করেন অশোক পতি ও অনন্য মামুন।
এ ছবির মধ্য দিয়ে বড় পর্দায় আসেন মডেল মেঘলা।
দর্শক নন্দিত এ ছবিতে মেঘলার অভিনয়ও দর্শকের মন
কাড়ে।
জুলহাস চৌধুরী পলাশ পরিচালিত ‘দুটি মনের
পাগলামী’ ছবিতে অভিষেক ঘটে নবাগত নুপুর ও
রোমিও-র। ছবিটি মুক্তি পায় ২৩ মে।
জুন মাসে মুক্তি পায় দেলোয়ার জাহান ঝন্টু
পরিচালিত 'হেডমাস্টার'। ছবিটি ওয়ার্ল্ড
প্রিমিয়ার হয় চ্যানেল আইতে। এ ছবির মাধ্যমে বড়
পর্দায় আসেন বীথি। গীতালি হাসান পরিচালিত
‘প্রিয়া তুমি সুখী হও’ ঈদুল ফিতরে ওয়ার্ল্ড
প্রিমিয়ার হয় চ্যানেল আইতে। এ ছবির
মাধ্যমে সেরা নাচিয়ের
সেরা পাঁচে থাকা শায়লা সাবির অভিষেক হয় বড়
পর্দায়।শায়লার বিপরীতে অভিনয় করেন ফেরদৌস।
২২ আগস্ট মুক্তি পায় মোস্তাফিজুর রহমান বাবু
পরিচালিত 'কখনো ভুলে যেওনা'। এ ছবির
মাধ্যমে বড় পর্দায় আগমন ঘটে তানিয়া ও পুষ্পিতার।
তানিয়া ও পুষ্পিতার বিপরীতে অভিনয় করেন ইমন।
ছবিটি ব্যবসায়িকবাবে মুখ থুবেড় পড়েছিল। একই
দিনে মুক্ত পায় মাশরুর পারভেজ ও আকিব পারভেজ
পরিচালিত 'অদৃশ্য শত্রু' এ ছবির মাধ্যমে বড় পর্দায়
আগমন ঘটে প্রিয়া আমানের।
সানিয়াত হোসেন পরিচালিত অল্প অল্প প্রেমের
গল্প মুক্তি পায় ২৯ আগস্ট। এ ছবির
পাশ্বনায়িকা হিসেবে বড় পর্দায় নাম লেখান হৃদি।
পাশ্বনায়িকা হিসেবে অভিনয় করলেও আইটেম গান
দিয়ে বাজিমাত করেন দর্শকের মন। অভিনয়েও
ছিলেন মূল নায়িকার সমান।
২৯ আগস্ট মুক্তি পায় মনতাজুর রহমান আকবর
পরিচালিত 'আগে যদি জানতাম তুই হবি পর' এ ছবির
মাধ্যমে বড় পর্দায় নাম লেখান কথা।
৫ সেপ্টেম্বর মুক্তি পায় শাহাদাৎ হোসেন লিটন
পিরচালিত 'লাভ স্টেশন'। এ ছবিতে অভিষেক হয়
মিষ্টি জান্নাতের। মিস্টির
বিপরীতে এতে অভিনয় করেন বাপ্পী।এটি ছাড়াও
মিষ্টির হাতে আছে আরও বেশ কয়েকটি ছবি।
একই মাসের ১২ তারিখে মুক্তি পায় খোকন
রিজভী পরিচালিত 'ভালোবাসলে দোষ
কি তাতে'। এ ছবিতে অভিষেক হয় নীড় নামে এক
নায়িকার।তার বিপরীতে ছিলেন নবাগত জয়
চৌধুরী।
২৬ সেপ্টেম্বর মুক্তি পায় কাজী হায়াৎ পরিচালিত
'সর্বনাশা ইয়াবা'। এ ছবির মাধ্যমে বড় পর্দায়
অভিষেক হয় ছোটপর্দার জনপ্রিয় মুখ লাক্স
তারকা প্রসূণ প্রসূন আজাদ ও তমা খানের। এ
ছবিতে প্রসূণ আজাদকে বেশ ভালভাবেই গ্রহণ
করে দর্শক। প্রসূণ আজাদ অভিনীত প্রথম ছবি ছিল
অচেনা হৃদয়।ছবিটি মুক্তি পাচ্ছে এ মাসেই।
প্রসূণের হাতে আছে আরও বেশ কয়েকটি ছবি।
ঈদুল আজহায় মুক্তি পায় ওয়াজেদ আলী সুমন
পরিচালিত 'হিটম্যান'। এ ছবির মাধ্যমে বড় পর্দায়
নাম লেখান শিরিন শিলা।এতে তার
বিপরীতে কাজ করেন জয় চৌধুরী। বছর শেষ
না হতেই ২৬ ডিসেম্বর মুক্তি পায় শিলার দ্বিতীয়
ছবি 'ক্ষণিকের ভালোবাসা'।
৩১ অক্টোবর মুক্তি পায় এম এ রহিম পরিচালিত
জানে না এ মন। এ ছবির মাধ্যমে বড় পর্দায় অভিষেক
হয় জানভীর। এতে জানভীর বিপরীতে কাজ করেন
ইমন।
মনতাজুর রহমান আকবর পরিচালিত 'মাই নেম ইজ
সিমি' মুক্তি পায় ৭ নভেম্বর। এই ছবির
মাধ্যমে অভিষেক হয় সিমি ইসলাম কলির।
ছবিটি প্রযোজনা করেন নায়িকা নিজেই। ২১
নভেম্বর মুক্তি পায় 'স্বপ্ন যে তুই'। মনিরুল ইসলাম
সোহেল পরিচালিত এই ছবিতে অভিষেক হয় আফ্রি-
র।
১২ই ডিসেম্বর মুক্তি পায় জাহিদুর রহিম অঞ্জন
পরিচালিত 'মেঘমল্লা'র। এ ছবির
মাধ্যমে ছোটপর্দা থেকে বড় পর্দায় নাম লেখান
অপর্না ঘোষ।মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক এ ছবিতে অপর্ণার
অভিনয় দর্শকনন্দিত হয়। ১৯ ডিসেম্বর মুক্তি পায়
শাহীন-সুমন পরিচালিত জিরো থেকে টপ হিরো। এ
ছবিতে নবাগত জেফের বিপরীতে অভিষেক হয়
লাক্স তারকা ইতিশা-র।বছরের শেষ শুক্রবার
মুক্তি পায় শাহ-আলম কিরন পরিচালিত 'একাত্তুরের
মা জননী'। এ ছবির মাধ্যমে প্রথমবারের
মতো বড়পর্দায় নাম লেখালেন ছোটপর্দার মিশু
চৌধুরী।আর এ বছরের শুরুতেই
মুক্তি পেয়েছে আলোচিত নবাগতা অমৃতা খানের
‘গেম’।
সবমিলিয়ে এক বছরেরও কিছু
বেশি সময়ে এফডিসিতে নায়িকা এসেছে ৩০এর
অধিক। এছাড়া নিয়মিত অনিয়মিত কাজ করছেন
আরো অনেকেই। এত নায়িকার
ভিড়ে হাতে গোনা দু-তিনজন ভাল অভিনয় করলেও
বাকীদের অবস্থা খুবই শোচনীয়। যারা নিজের
নামের পাশে ইতিমধ্যেই জড়িয়েছন
নায়িকা তকমা তারা কি পারবেন সেই নামের
যথার্থতা প্রমাণ করতে? পরিচালক-
প্রযোজকরা কি পারবেন এই নতুন নায়িকাদের
সেভাবে গড়ে তুলতে! যে স্বপ্ন তারা এই
নায়িকাদের চোখেমুখে ছড়িয়ে দিয়েছেন তার
কতটা প্রতিফলন ঘটাতে পারবেন তার?
আমরা কি পাবো না আমাদের
হারানো সুচিত্রা সেন, কবরী কিংবা শাবানা কে?
তথ্যকৃতজ্ঞতাঃ সুদীপ্ত সাঈদ




0 comments: