সিনেমার নাম- স্বপ্ন যে তুই
অভিনয়- ইমন, আঁচল, সাদেক বাচ্চু, আফ্রি, আদনান ও আরও অনেকে।
পরিচালক- মনিরুল ইসলাম সোহেল।
কাহিনী সংক্ষেপ-
গ্রাম থেকে কলেজে পড়তে আসা ‘সহজসরল’ তমাল (ইমন) প্রেমে পড়ে যায় প্রেমার(আফ্রি)। কিন্তু প্রেমে তো সফল হলেনই না,উল্টো সিনিয়রদের হাতে মার খেয়ে তমাল প্রতিজ্ঞা করল- জীবনে আর প্রেম করবে না, চাচার(সাদেক বাচ্চু) স্বপ্ন পূরণ করবে, জীবনে সবকিছুতে প্রথম হবে। ঘটনাক্রমে তার পরিচয় ঘটলো জেরির(আঁচল) সাথে। জেরি তমালকে সাহায্য করতে শুরু করল যাতে প্রেমা তমালের প্রেমে পড়ে। জেরির কথামত চলে “আনস্মার্ট” তমাল হয়ে গেল “স্মার্ট” টম। জেরির প্ল্যান কাজ করল- প্রেমা টমের প্রেমে পড়ল। কিন্তু এর মাঝে টম বুঝতে পারল মনের অজান্তে সে জেরিকে ভালোবেসে ফেলেছে। জেরিকে নিজের ভালোবাসার কথা বলতে গিয়ে টম আবিষ্কার করল- জেরি ইতিমধ্যেই আরেকজনের ‘হবু বউ’ হয়ে আছে। শুরু হয়ে টমের চেষ্টা, জেরির মন জয়ের।
দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, সিনেমাতে ইতিবাচক বিষয় নেই বললেই চলে। অভিনয়ে ভালো করেছেন আঁচল আর সাদেক বাচ্চু। আঁচলের হবু স্বামীর চরিত্রে (সিনেমাতে যার নাম আসিফ) অভিনয়কারী আদনান বেশ নজর কাড়েন। সিনেমার সবচেয়ে শক্তিশালী দিক হল এর গান। গানের দৃশ্যায়ন চমৎকার। গানে ব্যবহৃত নায়ক নায়িকাদের বিভিন্ন রঙের কস্টিউম চোখে বেশ আরাম দেয়। পারভেজের গাওয়া “জানে খুদা” গানটির দৃশ্যায়ন অনেকদিন মনে রাখার মতো।
নায়ক-নায়িকা পুরো সিনেমাতে বলছেন যে তারা কলেজে পড়েন- অথচ সিনেমার অর্ধেক শুটিং হয়েছে জাহাঙ্গীরনগর ভার্সিটিতে। সরকারি ভার্সিটিকে এত সহজে “কলেজ” বানিয়ে ফেলা সম্ভবত বাংলা সিনেমার পরিচালকের পক্ষেই সম্ভব! সিনেমার গল্প দুর্বল, সেই গল্পের মেকিং, স্ক্রিনপ্লে আর উপস্থাপনা গল্পের চেয়েও আরও বেশি দুর্বল। মিডিয়াতে এতদিন থাকার পড়েও ইমন অভিনয় জিনিসটা ঠিকমতো রপ্ত করতে পারলেন না- অথচ সিনেমার কেন্দ্রীয় চরিত্র তিনি। সিনেমাতে তিনি কলেজে পড়লেও একটি দৃশ্যে তার হাতে প্রাথমিক শ্রেণীর একটি বই ধরা অবস্থায় দেখা গেল। মীরাক্কেল খ্যাত আবু হেনা রনি, সজল আর জামিল- তিন তিনজন দুর্দান্ত পারফর্মারকে সিনেমাতে নেয়া হলেও- পরিচালক তাঁদের ঠিকমতো ব্যবহারই করতে পারেন নি। সিনেমার গান ভালো হলেও গানের প্রতিস্থাপন ঠিকমতো করতে পারেন নি পরিচালক- যেন “যেমন খুশি তেমন সাজ” এর মতো “যখন ইচ্ছে তখন গান”। নায়ক কান্না করছেন, এরকম একটি বিরহের দৃশ্যের মাঝেই দেখা গেল পরিচালক একটি “রোম্যান্টিক গান” জুড়ে দিয়েছেন। এছাড়া বাংলা সিনেমার সেই আদিকালের জিনিস- নায়ক নায়িকা ধাক্কা খেয়ে প্রেমে পড়া আর তার সাথে সাথেই গান শুরু হয়ে যাওয়া, গুণ্ডাদের মার খেয়ে অর্ধপ্রায় মৃত নায়ক তার নায়িকার চিৎকার শুনে শেষ মুহূর্তে জ্ঞান ফিরে পান এবং শরীরে অসীম শক্তি লাভ করেন- এগুলোও ছিল সিনেমাতে। একটি কথা না বললেই নয়, আবহসংগীত এর ক্ষেত্রে পরিচালক বেশ “উদারতার” পরিচয় দিয়েছেন। বলিউড এর “কিসনা- দ্যা ওয়ারিওর পোয়েট”, শাহরুখ খানের “ডন” আর ঋত্বিক রোশনের “কৃষ” সিনেমার আবহসংগীত তিনি নিজের সিনেমায় বেশ ভালোভাবেই ব্যবহার করেছেন।
পরিচালক মনিরুল ইসলাম সোহেলের পরিচালনায় তার প্রথম সিনেমা এটি। প্রথম সিনেমাতে এত অযত্নের ছাপ- বেশ হতাশার জন্ম দেয়। সুন্দর ছয়টি গান সেই হতাশাকে ঢাকতে পারে না। এভাবে চলতে থাকলে “স্বপ্ন যে তুই” এর মতো সিনেমা 'দুঃস্বপ্নে' পরিণত হতে বাধ্য।

0 comments: