‘ইফ ইউ গিভ মি চান্স, আই উইল গিভ ইউ মাই ব্রেস্ট’!
অর্থাত ভোট দিলে দুধ দেব!!
এসব কী কান্ড বলুন দেখি? এ মেয়েকে কোথায় রাখি!
দিব্যি তো ছিলেন সুন্দরী সেলুলয়েডের পর্দায়!
সেখানেই দাপুটে লাস্য আর অট্টহাস্য নিয়ে এতদিন পুরুষদের রাতের ঘুম উড়ন-ছু করে আসছিলেন
রাখী সাবন্ত। আর যাঁদের চোখে তার পরেও ঘুম এসেছে, স্বপ্নে দেখা
দিয়ে তাঁদের বিপদে ফেলেছেন কন্যে। এভাবেই বেশ কাটছিলও দিন। তারই মাঝে রাজনীতি নিয়ে রাতারাতি এই ভোল বদল!
কিন্তু সেই রগরগে আইটেম-ইমেজ বদলিয়েছে কি?
কোথায় আর! সেই জন্যই রাখী সাবন্তকে নিয়ে মিমিক্রিতে
ছেয়ে গেছে সোশ্যাল নেটওয়ার্ক। ওপরের ওই ইংরেজি বাক্যটা তারই সবচেয়ে নিরীহ নমুনা মাত্র। রাখী যে ইংরেজি বলতে
পারেন না!
তবে যতই রাজনীতির ময়দানে সেলুলয়েডের বিনোদন
ছেড়ে পা ফেলুন না কেন, ব্যাপারটা আসলে এক-ই। তখন ভক্তদের ঘুম কেড়ে
নিতেন রাখী আর এখন কাড়বেন দুর্নীতিগ্রস্থ নেতাদের ঘুম। তেমনটাই অন্তত দাবি করছেন মেয়ে নিজেই।
‘লোকসভা নির্বাচন লড়তে চাইছি ঘুমন্ত মন্ত্রিদের
জাগিয়ে তোলার জন্য! ওরা নেতা না গন্ডার? খালি এতদিন
ধরে সাধারণ মানুষের রক্ত চুষে খেয়েছে সব’, রাখীর দাবি।
বাস্ রে! ভাষার বহরটা দেখছেন তো?
কী আর করা! রাখী সাবন্তের ব্যক্তিত্বটাই তো
এমনধারা! কোথাওই এতটুকু রাখঢাকের ধার ধারেন না মেয়ে। আর রাজনীতির নরম, সংবেদনশীল আবেদন? গুলি মারুন! ওসব রাখী সাবন্তের কাছে মিলবে
না। মেয়ের দলের নিশানা
যেমন সবুজ ধানি লঙ্কা, মেয়েও তো তেমনই পটাকা!
সেটার হাড়ে হাড়ে প্রমাণ মিলেছিল, যখন মনোনয়ন পত্র দাখিল
করতে এসেছিলেন রাখী নির্বাচন কমিশনের অফিসে।
মোদী রাখী
তবে মনোনয়নপত্র দাখিল করা নিয়ে কম নৌটঙ্কি
করেননি নতুন এই দেশনেতা। প্রথমে তো রাখী চোখ বুজে একটাই নাম জপ করে চলেছিলেন,
‘হর হর মোদী, ঘর ঘর মোদী’!
গলার শিরা ফুলিয়ে রাখী সেই সময়ে বলেছিলেনও, নরেন্দ্র মোদীকে তিনি তাঁর দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে
চান। বিজেপি-র সদস্যরাও
তখন বলতেন যে রাখী তাঁদের বেটি! বেশি দিন নয়, এসবই গেল মার্চ মাসের প্রথম দিকের কিস্যা।
তার পর কী হল কে জানে! হয়তো পুরুষতান্ত্রিকতার
অধীনে থাকতে আর মন চায়নি মেয়ের। অবশ্য রাখী বলছেন যে বিজেপির তরফ থেকে পশ্চিমবঙ্গের শ্রীরামপুরে
লোকসভা নির্বাচন লড়ার টিকিট দেওয়া হচ্ছিল তাঁকে। নেহাত বাংলাটা একেবারে জানেন না বলে তিনি
পিছিয়ে এলেন। তা, সেখান থেকেই কি নিজের দল গড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া?
নিজের শহরে, নিজের ভাষায় প্রচারের
সিদ্ধান্ত?
র্যাপ রাখী
সে সব বিতর্ক বরং থাক! মার্চ মাসের শেষের
দিক থেকে কোমর বেঁধে, সব ভার নিজের কাঁধে তুলে, দেশের জন্য লড়তে নেমেছেন রাখী- এটাই তো আসল খবর। তা, এই রাজনীতির ময়দানে খেলতে নামা নিয়ে কী বলছেন তিনি?
‘আমি কোনও অনাথ রাজনীতিক নই, আবার স্বনির্ভরও নই। আমার নিজের দল আছে। আমার সঙ্গে সেই দলের সমর্থন আছে। আমি সেই দলের ভাইস প্রেসিডেন্ট’, জোর গলায় এভাবে বক্তব্য আর মনোনয়ন- দুই-ই দাখিল করেছেন রাখী।
সেও না-হয় হল। কিন্তু দলের নাম কী?
সেখানেই লুকিয়ে রয়েছে আসল চমক। রাখীর দলের নাম ‘রাষ্ট্রীয় আম পার্টি’। সংক্ষেপে, র্যাপ। এ কি আম আদমি পার্টি-র অনুসরণ?
‘মোটেও তা নয়। ওদেরটা ওদের মতো, আমারটা আমার মতো। আমার পার্টির ইস্তেহার দেখলেই সেটা বুঝতে পারবেন’, রাখীকে দমায় সাধ্য কার?
আর রাজনীতিক প্রতিশ্রুতি? ‘আমি দুঃখী জনতার পাশে দাঁড়াতে চাই আর সেই সঙ্গে দেশের মেয়েগুলোকে
আরেকটু ভালভাবে বাঁচার রাস্তাটা দেখিয়ে দিতে চাই’, চেনা ছকেই হাঁটতে চাইছেন মেয়ে।
অবশ্য, তলিয়ে দেখলে, যাঁদের পাশে থাকতে চাইছেন মেয়ে, এক সময়ে সেই জায়গা থেকেই শুরু হয়েছিল তাঁর বেঁচে থাকার লড়াই। এখন যদি সেই দিনগুলো
তাঁর মনে পড়ে যায়, তবে অবাক হওয়ার কী আছে?
সাজ রাখী
কিন্তু নিন্দুকদের মুখ বন্ধ করা মোটেও সহজ
কাজ নয়। বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে তাই থেকেই যাচ্ছেন রাখী। সবুজ লঙ্কার মতো কানের দুল, হাতের বালা, সবুজ জহরকোট,
টুপি আর কুর্তির সাজে তাঁর নির্বাচনী প্রচার নিয়ে চলছে জটলার
পর জটলা। তার ওপর আবার সম্প্রতি মেয়েকে নিয়ে চলছে অন্য এক সমস্যাও।
রাজ রাখী
এপ্রিলের শুরুর দিকে একটি এফিডেভিটে মেয়ে
জানিয়েছিলেন, তাঁর সব মিলিয়ে সম্পত্তি রয়েছে প্রায় ১৫ কোটি
টাকার মতো। আর যা সেই এফিডেভিটে জানাতে ভোলেননি মেয়ে, তা হল তিনি সম্পূর্ণ নিরক্ষর। এই দুই নিয়েই এখন শুরু হয়েছে জল ঘোলা। হিসেব-নিকেশ বলছে, সনিয়া গাঁধীরও না কি এত সম্পত্তি নেই! তাহলে রাখীর এত টাকা হয় কী করে? তাছাড়া, নিরক্ষর এক নারী কীভাবে
দেশ সেবা করবে? সেই যোগ্যতা কি আদৌ আছে মেয়ের?
রাখীর কিন্তু একটাই পাল্টা জবাব! যাঁদের জন্য
কাজ করতে চাইছেন তিনি, তাঁরাও নিরক্ষর। অশিক্ষা নিয়েই বয়ে
চলেছে ভারতের অনেক অনেক মানুষের জীবনধারা। সে সব নিয়ে কারওরই মাথাব্যথা থাকে না। নেতারা শুধু সেই সব নিরক্ষর মানুষদের ভোটটুকু
নিয়েই ক্ষান্ত থাকেন। তাঁদের ঘরে শিক্ষার আলো পৌঁছিয়ে দেওয়ারও দরকার মনে করেন না কেউ নির্বাচন জিতে গেলেই!
এখন নিরক্ষরতা যদি ভোট দেওয়ার পথে অন্তরায় না হয়, তবে ভোট নেওয়ার পথেই বা হবে কেন?
খুব কাটা-কাটা বাস্তববাদী কথা, না? তা, সহজ কথা তো সহজ ভাবে বরাবরই বলে এসেছেন এই ঠোঁটকাটা মেয়ে। এখন শুধু দেখার,
আদৌ তিনি জিততে পারেন কি না!
বলিউড কি ভোট দেবে তাঁকে?

0 comments: