Friday, 6 November 2015

‘চাষী নজরুল আমার সঙ্গে বেঈমানি করেছেন’



দিন পেরিয়ে রাত পোহালেই ৬ই নভেম্বর, শুক্রবার। এ দিন ‘অন্তরঙ্গ’ ছবির মাধ্যমে বড় পর্দায় অভিষেক ঘটতে যাচ্ছে আলিশা প্রধানের। প্রয়াত গুণী পরিচালক চাষী নজরুল ইসলামের এটাই শেষ ছবি। ছবিতে আলিশার বিপরীতে অভিনয় করেছেন ইমন। ছবি ও নানা প্রসঙ্গে প্রিয়.কম-এর সঙ্গে কথা বললেন আলিশা প্রধান।
প্রথম ছবি মুক্তি পাচ্ছে, আপনি কি উত্তেজিত?
আলিশা: প্রায় দেড় বছর আগে ছবিটির কাজ শুরু করেছিলাম। তারপর নানা ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে আগামীকাল ছবিটি মুক্তি পাচ্ছে। এতদিন পরে ছবিটি মুক্তি পাচ্ছে যে, সেই অনুভূতিটাই আমার শূণ্য হয়ে গেছে। সেই সঙ্গে আমার সঙ্গে নেই আমার পরিচালক চাষী নজরুল ইসলামও। ফলে যুদ্ধটা একাই করতে হচ্ছে।
প্রচার-প্রচারণায় চাষী নজরুলের ইসলামের শেষ ছবি?
‘চাষী নজরুল ইসলামের শেষ ছবি’- বাক্যটা আমাদের প্রচারণায় আছে। কিন্তু এটা কোন মার্কেটিং পলিসি নয়, এটা ইউনিভার্সাল ট্রুথ। আর এটা আমরা এজন্যই করেছি যে, মানুষের আসলে মনে থাকার কথা না যে চাষী নজরুলের শেষ ছবি কোনটা। আমরা এটা মানুষকে মনে করিয়ে দিয়েছি যে এটা চাষী নজরুলের শেষ ছবি। আর এটা আপনাকে স্বীকার করতে হবে যে, এটা কিন্তু চাষী নজরুলের শেষ ছবি হিসেবে নির্মিত হয় নি। আমরা কেউই কোনদিন কল্পনাও করিনি যে এটাই চাষী নজরুল ইসলামের শেষ ছবি হবে। আর গল্প নির্মাণ সবকিছু মিলিয়ে অসাধারণ একটা ছবি।তবে আমার খারাপ লাগছে এই সময়ে আমি চাষী নজরুল ইসলামকে পাশে পাচ্ছি না। ছবি মুক্তির অনেক আগেই সবাইকে কাঁদিয়ে তিনি না ফেরার দেশে চলে গেছেন।চাষী নজরুলের সঙ্গে আমার অভিমান এখানেই। চাষী নজরুল আমার সঙ্গে বেঈমানি করেছেন। আর ক’টা দিন বেঁচে থাকলে তাঁর কিইবা ক্ষতি হতো।
অভিমানের মাত্রাটা বেশি হয়ে গেল না?
না, যা স্বাভাবিক তাই বলছি।চাষী নজরুল ইসলাম স্যার থাকলে আমার এতটা কষ্ট করতে হতো না। কারণ উনি ছিলেন আমার ফ্রেন্ড, গাইড এবং অভিভাবক। উনি থাকলে কীভাবে রিলিজ করতে হবে, কীভাবে কি করতে হবে তা নিয়ে ভাবতে হতো না। এ ছাড়া উনার সঙ্গে আরও পাঁচটা বছর কাজ করতে পারলে আমি আরও অনেক কিছু শিখতে পারতাম।
দর্শক চাষী নজরুলের ছবি, তাঁর গল্প বলার ধরণ, তাঁর নির্মাণের সঙ্গে পরিচিত। কিন্তু ‘অন্তরঙ্গ’ ছবিতে তিনি যে নায়িকা উপহার দিয়েছেন তার সঙ্গে দর্শক পরিচিত নন। দর্শক কি এই নায়িকাকে দেখে নিরাশ হবে?
আলিশা: আমার মনে হয় না দর্শক আমাকে দেখে নিরাশ হবেন। খুব সুন্দর একটি গল্পে আমি কাজ করেছি। নিজেকে শতভাগ মেলে ধরার চেষ্টা করেছি। আগে ভাবতাম যে গল্প, নাচ, গান আর ফাইট থাকলেই হয় তো ছবি হয়ে যায়। কিন্তু না এখন দেখছি আরও অনেক কিছুই লাগে। ‘অন্তরঙ্গ’ সেই অনেক কিছুরই একটি সফল সমন্বয়। ফলে আমি স্বাভাবিকভাবেই ধরে নিতে পারি যে দর্শক এই ছবিটি রিজেক্ট করবে না।
দর্শক যদি এই ছবি গ্রহণ না করে তখন কি করবেন? অভিনয় কি ছেড়ে দিবেন? নাকি চেষ্টা চালিয়ে যাবেন?
দেখুন আমি জোর করে নায়িকা হয়েছি।কিন্তু দর্শক না নিলে আমি জোর করে চলচ্চিত্রে থাকতে চাই না।এটা আমার প্রথম ছবি।আমি চাইবো দর্শক আমাকে গ্রহণ করবে। কিন্তু দর্শক যদি আমাকে গ্রহণ না করে তাহলে আমি আর অভিনয় করবো না।অবশ্য আরও দুটি ছবি অসমাপ্ত রয়েছে সেই দুটি ছবিতে আমাকে দেখা যাবে।একটি হচ্ছে এজে রানা পরিচালিত ‘অজান্তে ভালোবাসা’ ও আরেকটি হচ্ছে জাকির হোসেন রাজু পরিচালিত ‘প্রেমের কাজল’। এই তিনটি ছবির রেজাল্ট দেখার পরই আমি সিদ্ধান্ত নিবো আমি অভিনয় করবো কি না? কারণ দর্শকের চাহিদার বাইরে আমি অভিনয় চালিয়ে যেতে চাই না।
আপনিই এই ছবির প্রযোজক। আপনার ছবির নায়ক ইমন। কাকরাইল পাড়ায় একটা কথা প্রচলিত আছে যে ইমনের ছবি চলে না, আদতেও বেশিরভাগ ছবিই ফ্লপ।এই বিষটা নিয়ে আপনি শঙ্কিত কি না?
আলিশা: ইমন কিন্তু অনেক ভাল ভাল ছবি করেছে। কিন্তু তার ভাগ্য তার সহায় নি। দর্শক তাকে গ্রহণ করেনি। এই ছবিতে ইমন অনেক ভাল অভিনয় করেছে। আমি মনে করি এই ছবির মাধ্যমে আবারো ইমনের বাজার ঘুরে যাবে। ইমন আবারো ফিরে আসবে। আর ছবির নেগেটিভ ব্যাপার নিয়ে আমি আপাতত ভাবছি না।
আপনি নিজে তো আপনার ছবি দেখেছেন, নিজের ছবি দেখে কি আপনি তৃপ্ত?
আলিশা: ছবিটা আমার কাছে খারাপ লাগে নি। আর সবচেয়ে বড় কথা আমি ছবি দেখেছি জাকির হোসেন রাজু, আব্দুল আজিজসহ অনেক বড় বড় পরিচালকদের সঙ্গে বসে। তারা আমাকে বলেছে ছবিটা তাদের ভাল লেগেছে। এরপর আর কোন কথা বলা প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না।
একটা ছবির রঙিন গল্পের পেছনে অনেক কষ্ট আর তিক্ততার অভিজ্ঞতাও থাকে, সেইসব কষ্টের গল্প যদি বলেন?
আলিশা: ‘অন্তরঙ্গ’ অনেক কষ্ট আর অনেক ত্যাগের ফসল।প্রত্যেকটা পদে পদে আমাকে কষ্ট করতে হয়েছে।বাঁধা অতিক্রম করতে হয়েছে।ভাবিনি এই ছবিটা নিয়ে এতটা বাঁধা আমাকে ডিঙ্গাতে হবে। ডিস্ট্রিবিউশন, মার্কেটিং, থেকে শুরু করে সবকিছুতেই সমস্যা মোকাবেলা করে আমাকে এগুতে হয়েছে। কোনোকিছুই সহজ ছিলনা আমার জন্য।
কোন শ্রেণীর দর্শকরা দেখবে অন্তরঙ্গ?
আলিশা: এটা মজার একটি বিষয় যে, এই ছবিটা সব শ্রেণীর দর্শকরা দেখবে। কারণ এই ছবিতে একই সঙ্গে সাধারণ দর্শকদের জন্য যেমন কমার্শিয়াল এলিমেন্ট আছে, তেমনি আছে এলিট শ্রেণীর উপযোগী রুচিশীল গল্পের উপস্থাপনাও। আর ছবিতে আমাকে দেখবে একেবারেই একটি ভিন্ন চরিত্রে।আমি বলবো এটি একটি সোশ্যাল কমার্শিয়াল ছবি। আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি কেউ বলতে পারবে না ছবিটা খারাপ।


SHARE THIS

Author:

Facebook Comment

0 comments: